শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৫০ পূর্বাহ্ন
অভিযান লোক দেখানো পাবনায় প্রশাসনের নাকের ডগায় ভেজাল ওষুধকোম্পানী! Reading Time: 2 minutes
নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা:
পাবনা শহরের প্রাণকেন্দ্রে, জুবীলি ট্যাংক বা রাষ্ট্রপতি ফিটনেস ক্লাবের পুর্ব পাশে, পাবনা সদর পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ১শ গজ, পাবনা ঔষধ প্রশাসন অফিসের ১শ গজ দুরে এবং সদর থানা থেকেমাত্র ৩শ গজ দুরে, এমনকি রাষ্ট্রপতির বাসভবনের গেটের সামনেই চলছে মানব জীবন হুমকির মুখে ফেলা ভেজাল/নকল ওষুধ ও নকল শিশুখাদ্যে তৈরী ও বাজারজাত।প্রশাসনের প্রতিটি সংস্থার তীক্ষ নজরদারি থাকার পড়েও অবলিলায় এই অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। পাবনার ভেজাল ও নকল স¤্রাজের রাজা মোঃ হায়দার আলী। তার এই দীর্ঘ ২০-২৫ বছরের অপকর্মের ধারাবাহিকতা কেবল বিস্ময়কর নই, স্থানীয়প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।
স্কয়ারের সাবেক কর্মচারী থেকে কোটিপতি ভেজাল চক্রের কে এই মহানায়ক হায়দার আলী। জানা গেছে, পাবনা শহরের জুবলি ট্যাংক পাড়া শিবরামপুর মহল্লার বাসিন্দা, মৃত হবিবর রহমানের পুত্র মোঃ হায়দার আলী। একসময় দেশের স্বনামধন্য স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস-এর কর্মচারী ছিলেন। কিন্তু ঔষধ চুরির অভিযোগে তার চাকরি চলে যায়। এরপর সে নিজেই নেমে পড়েন ভেজাল/নকল ওষুধ ও শিশু ভেজাল খাদ্য তৈরির অন্ধকার জগতে। শুরুতে গোপনে একটি কারখানা তৈরি করে সবার নজর এড়িয়ে ভেজাল ঔষধ বাজারজাত করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান।
এরপর সে পিপ নামক একটি ওষুধ কোম্পানির পরিত্যক্ত গোডাউন ক্রয় করে এবং সেখানে গোপনে বিভিন্ন অত্যাধুনিক ওষুধ প্রস্তুতকারী মেশিন স্থাপন করে। দেশীয় বিভিন্ন ব্রান্ডের নামীদামি ওষুধ কোম্পানির নকল ওষুধ, নকল শিশুখাদ্য, এমনকি শিশুদের জন্য নকল অ্যান্টিবায়েটিক তৈরি করে বাজার জাত করে থাকে।
হায়দার আলী ২০০৮ সালেপ্রথম ১/১১ সরকারের সময়ে বিপুল পরিমান নামি-দামি ও বিদেশি ব্রান্ডের নকল ঔষধ ও মেশিনারীজ সহ র্যাবের অভিযানে গ্রেফতার হন। সেই অভিযানে মেশিনারীজসহ প্রায় কোটি টাকার ভেজাল ঔষধ জব্দ করে এবং তার বিরুদ্ধে পাবনা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এরপর হায়দার আলী জামিনে মুক্ত হয়ে একই ভাবে পুর্বের কার্যক্রম চালু করেন। হায়দার আলী জীবন রক্ষাকারীনকল ঔষধ ও শিশু খাদ্য তৈরী করলেও জেলা প্রশাসন অথবা আইন রক্ষাকারী শৃংখলা রক্ষাকারী বাহীনি নামমাত্র জরিমানা দন্ড দিয়ে আবার তাকে অবৈধ ব্যবসা শুরু করার সুযোগ করে দেয়। অথচ ভ্রাম্যমান আদালতে একই ব্যাক্তি একই অপরাধে একের অধিক বার অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনের দন্ড বিধির ধারায় মামলা দায়ের করার বিধান রয়েছে। তার বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ধারায় মামলা না কওে, অভিযান পরিচালনাকারী সংস্থা অজ্ঞাতকারনে নামমাত্র অর্থদন্ড করে থাকেন। বিগতদিনে তার বিরুদ্ধে কয়েকবার অভিযানের অর্থদন্ডের তালিকা দেয়া হলো। ২য় বার অভিযানে ৩ লক্ষ, ৩য়বার অভিযানে ২ লক্ষ ৫০ হাজার, ৪র্থ বার অভিযানে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সর্বশেষ গত ৫ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে অভিযানে মাত্র ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অথচ অভিযানকারী দল যখনই অভিযান পরিচালনা করেন, তখন কমপক্ষে মেশিনারীজ, কাঁচামাল ও তৈরীকৃত ঔষধ প্যাকিংসহ কয়েক কোটি টাকার মালামাল পেয়ে থাকেন। হায়দার আলী পাবনা জেলা তথা উত্তরবঙ্গের মধ্যে শীর্ষ নকল ঔষধ প্রস্ততকারী ব্যাক্তি হিসাবে পরিচিত।
এলাকার সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, ভেজাল বা নকল ঔষধ প্রস্ততকারীর বিরুদ্ধে কেন দেশের প্রচলিত আইনে দন্ড বিধির ধারায় মামলা রজু হয় না। তাহলে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই কি হায়দার আলী এমন ভেজাল বা নকল ঔষধ তৈরী করছেন। যা সেবন করে মানুষ মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে।
“এই হায়দার আলীর কোন ‘ক্ষমতা বলে’ সে দীর্ঘ ২০/২৫ বৎসর যাবৎ প্রশাসনের নাকের ডগার উপর বসে এই ধরণের ভেজাল ঔষুধ, নকল শিশু খাদ্য, শিশুদের নকল অ্যান্টিবায়েটিক তৈরি করে মানব জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে? পাবনা জেলায় কি এই অসৎ হায়দার আলীকে আইনের আওতায় আনার মত কেউ নেই প্রশ্ন পাবনাবাসীর?”
না এর পেছনে কোনো অদৃশ্য শক্তির মদদ রয়েছে কিনা সেই প্রশ্নও জোরালো হচ্ছে। অবিলম্বে এই ভেজাল ঔষধের সা¤্রাজ্যের মূল উৎপাটন এবং এর পেছনে কোনো প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক যোগসাজশ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত পুর্বক তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থানিতে প্রশাসনের কাছে এলাকাবাসীর জোর দাবি।